প্যারিসে ৫০ বছর পত্রিকা বিক্রি করে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা পাচ্ছেন আকবর


প্যারিসে ৫০ বছর পত্রিকা বিক্রি করে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা পাচ্ছেন আকবর

অর্ধশতাব্দী ধরে প্যারিসের রাজপথে হাঁটতে হাঁটতে পত্রিকা বিক্রি করছেন এক প্রবাসী, যাঁর নাম এখন উঠে এসেছে জাতীয় পর্যায়ের সম্মাননায়। ৭২ বছর বয়সী আলী আকবর এবার পেতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাগরিক স্বীকৃতি।

বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ আলী আকবরকে ‘অর্ডার অব মেরিট’ সম্মাননায় ভূষিত করতে যাচ্ছেন। এই পুরস্কারটি ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননাগুলোর একটি। প্রায় পাঁচ দশক ধরে সংবাদপত্র বিক্রির মাধ্যমে ফরাসি সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্যই তাঁকে এ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শুধু ফ্রান্স নয়, গোটা ইউরোপে সম্ভবত তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এখনো রাস্তায় রাস্তায় পত্রিকা বিক্রি করেন। এমনকি এক সময় তাঁর কাছ থেকেই নিয়মিত পত্রিকা কিনতেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।

আলী আকবরের জন্ম পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। ইউরোপে পা রাখেন ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে। প্রথম গন্তব্য ছিল নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম, যেখানে একটি ক্রুজ জাহাজে চাকরি নেন। ১৯৭২ সালে জাহাজটি ফ্রান্সের রোয়াঁ বন্দরে এসে পৌঁছায়, আর এর এক বছর পর, ১৯৭৩ সালে, তিনি চলে আসেন প্যারিসে। সেখানে শুরু করেন পত্রিকা বিক্রির কাজ। ফ্রান্সে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পান ১৯৮০ সালে।

আলী আকবর বলেন, “১৯৭৩ সালে আমি যখন এই পেশা শুরু করি, তখন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আমি একা। সবাই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে।”

বর্তমানে তিনি প্রতিদিন প্যারিসের বিভিন্ন ক্যাফেতে গিয়ে ‘লো মন্দ’ নামের ফরাসি দৈনিকের প্রায় ৩০টি কপি বিক্রি করেন। আকবর বলেন, “এখন সবকিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে। মানুষ মোবাইলে খবর পড়ে।”

তিনি আরও যোগ করেন, “ইন্টারনেট আসার আগে লোকজন চারপাশে ভিড় করত পত্রিকা কেনার জন্য। আর এখন আমাকে উল্টো গ্রাহকদের পেছনে ছুটতে হয়।”

প্যারিসের সেন্ট জার্মেই এলাকাকে একসময় বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সেই সময় অনেক তারকাসহ গুণীজনদের সংস্পর্শে এসেছিলেন আকবর। একবার বিখ্যাত ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী এলটন জন তাঁকে চা খাওয়ান। এছাড়া, সায়েন্স পো ইউনিভার্সিটির সামনে পত্রিকা বিক্রি করতে গিয়ে দেখা হয়েছিল এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গেও।

আলী আকবর বলেন, “লেফট ব্যাংক এলাকায় এক সময় লেখক, প্রকাশক, শিল্পী ও অভিনয়শিল্পীদের ভিড় থাকত। এখন সেই প্রাণটাই আর নেই। এটি এখন শুধু পর্যটকদের শহরে পরিণত হয়েছে।”

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×