মৃত ভেবে ৮ ঘন্টা মর্গের রেফ্রিজারেটরে রাখা শিশুটি বেঁচে ফিরলো
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৬:৫৫ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
গাজার ১২ বছর বয়সী রাঘাদ আল-আসার এক বছর আগে ইসরায়েলের হামলায় নিজে গুরুতর আহত হন এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। হামলায় তার দুই বোন নিহত হয় এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা আহত হয়েছিলেন। রাঘাদকেও মৃত ভেবে তার দুই বোনের সঙ্গে গাজার একটি মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হিমঘরে প্রায় আট ঘণ্টা অবস্থান করার পর অলৌকিকভাবে বাঁচেন সে।
সেদিন আরেক ফিলিস্তিনি বাবা নিজের ছেলেকে খুঁজতে মর্গে এসেছিলেন। তিনি মর্গের হিমঘরে থাকা মৃতদেহগুলো একে একে দেখতে শুরু করেন। হঠাৎ দেখেন, ঠান্ডা স্ল্যাবের ওপর পড়ে থাকা এক বালিকার আঙুল একটু একটু নড়ছে।
হাসপাতালে কোমায় থাকার দুই সপ্তাহ পর জেগে ওঠার সময় রাঘাদের পরিবার তাকে জানায়, তাকে মর্গের রেফ্রিজারেটরে রাখা হয়েছিল।
আল-জাজিরার কাছে রাঘাদ বর্ণনা করেছেন, “অন্যদের মতো আমরাও আমাদের বাড়িতে বসে ছিলাম। হঠাৎ গুলি, যুদ্ধবিমান, ড্রোন সব আমাদের ওপর আছড়ে পড়ে।”
তার বাবা মোহাম্মদ আল-আসার বলেন, “আমার কাছে খবর এল, আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে। আমি কাজে ছিলাম। কী ঘটেছে, জানতে আমি সোজা হাসপাতালে ছুটে যাই। কিন্তু রাঘাদকে সেখানে খুঁজে পাইনি। পরে বাড়ির ধ্বংসস্তূপ খুঁজেও পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের হিমঘর থেকে উদ্ধার হয়।”
হামলার দিন তার দুই বোন নিহত হয়েছিলেন। গুরুতর আহত বড় বোনের অবস্থা এখনও অত্যন্ত খারাপ। রাঘাদ বলেন, “বড় বোন এক চোখে দেখতে পায় না, শরীর অনেকটা পুড়ে গেছে, গভীর ক্ষত রয়েছে ও পেটের পীড়াতেও আক্রান্ত।”
গাজায় চলমান এই যুদ্ধের পরিসংখ্যানও শোচনীয়। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় প্রায় ৬৪ হাজার শিশু নিহত বা পঙ্গু হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধের মধ্যে এখনও পর্যন্ত ৬৯,১৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।
রাঘাদ আল-আসার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার প্রভাব এখনও তার উপর বিদ্যমান। সে এখনও দুঃস্বপ্ন দেখে এবং যুদ্ধের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। রাঘাদ বলেছে, “আমি সেদিনের কথা মনে করতে চাই না, আমি যুদ্ধের শব্দ শুনতে চাই না। যুদ্ধবিমান ওড়া ও বোমার আওয়াজ পেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।”
রাঘাদের পরিবার আশা করছে, তার এবং আহত বোনের চিকিৎসার জন্য তাদের বিদেশে নেওয়া হবে। তবে দুই বছরের যুদ্ধে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত, হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধা সীমিত এবং বহু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন।
রাঘাদ বলেছে, “আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চাই। বিদেশে অন্যরা যেভাবে জীবন কাটায়, সেভাবে জীবন কাটানোর অধিকার প্রতিটি শিশুর আছে; তাদের মতো খেলাধুলা করার, তাদের মতো ভালো থাকার অধিকার সবার আছে।”