কুয়েতে গৃহকর্মী নিয়োগের আড়ালে মানব পাচার


কুয়েতে গৃহকর্মী নিয়োগের আড়ালে মানব পাচার

কুয়েতে গৃহকর্মী (খাদেম) নিয়োগের আড়ালে মানব পাচার ও প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, রেসিডেন্সি গোয়েন্দাদের সুচারু তদন্ত শেষে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রণালয় জানায়, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি কুয়েতি নাগরিকের নামে গৃহকর্মী নিয়োগ দেখিয়ে বিদেশ থেকে কর্মী আনত। তবে কুয়েতে পৌঁছানোর পর তাদের নির্ধারিত ঠিকানা ছাড়া অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হতো। এ প্রক্রিয়ায় প্রতিটি গৃহকর্মীর কাছ থেকে ১,২০০ থেকে ১,৩০০ কুয়েতি দিনার পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হতো, যা সরকারি নির্ধারিত সীমার অনেক বেশি।

তদন্তে আরও বেরিয়ে আসে, গৃহকর্মী বদলানোর কাজে সহযোগীদের ৫০ থেকে ১০০ দিনার করে দেওয়া হতো। মন্ত্রণালয়ের দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কুয়েতে ৭ লাখের বেশি গৃহকর্মী কাজ করছেন, যাদের বড় অংশই এশীয় দেশের নাগরিক। দেশের মোট প্রবাসী জনগোষ্ঠীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এই খাতে নিয়োজিত। তাই গৃহকর্মী নিয়োগে কোনো অনিয়ম বা মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে সরকার তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করে।

অন্যদিকে, দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ নাজাহা জানায়, সম্পদের বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ২৪ জন সরকারি কর্মকর্তাকে পাবলিক প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে। তাদের গত অক্টোবরের মধ্যেই বিবরণী জমা দেওয়ার কথা ছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এমন অভিযোগে বহু বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের আইন অনুযায়ী মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাষ্ট্রীয় কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বোর্ড সদস্যদের দায়িত্ব নেওয়া ও অবসরের আগে সম্পদের বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক।

সম্প্রতি মানব পাচার, ভিসা বাণিজ্য ও মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে কুয়েত সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দেশে-বিদেশে সক্রিয় অপরাধচক্র মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। বিভিন্ন অফিস, বাসা, দোকান, সড়ক, কৃষি ফার্ম- সব জায়গাতেই তল্লাশি অভিযান চলছে।

কুয়েতি আইনে একজন নিয়োগদাতার ইকামা নিয়ে অন্যত্র কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; এমনকি মালিকের অনুমতি ছাড়া তার বাড়ি বাদে অন্য কোথাও রাতযাপন করাও আইনবিরোধী।

বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা অভিযোগ করেছেন, ‘ফ্রি ভিসা’ বা ২০ নম্বর (খাদেম) ও ১৮ নম্বর (শ্রমিক) ভিসার নামে ৮-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করে কুয়েতে আসছেন। অথচ বাস্তবে ‘ফ্রি ভিসা’ বলে কিছু নেই। ফলে অনেকেই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে চাকরি হারানো, গ্রেপ্তার কিংবা নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের প্রতারণা প্রতিরোধে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।

২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে মোট ৩৪,১৪৩ প্রবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে কুয়েত। এদের বিরুদ্ধে বসবাসের আইন লঙ্ঘন, অপরাধমূলক কাজ, নৈতিক অপরাধ ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী আচরণের অভিযোগ ছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুয়েতের স্থিতিশীলতা ও জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে নাগরিক বা প্রবাসী- কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মানব পাচার, ভিসা বাণিজ্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের সাম্প্রতিক কঠোর অবস্থান প্রবাসী শ্রমবাজারকে আরও শৃঙ্খলিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে তারা মনে করে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×