ক্ষমতা ছাড়ার পর যে সব বিশ্বনেতা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন


ক্ষমতা ছাড়ার পর যে সব বিশ্বনেতা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন

ক্ষমতা হারানোর পর আইনগত জবাবদিহির মুখোমুখি হওয়া বিশ্বনেতার সংখ্যা কম নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা দুর্নীতি, প্রতারণা থেকে শুরু করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে আদালতে দাঁড়িয়েছেন। ঠিক গত মাসেই কারাভোগ করেছেন ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। একই তালিকায় আছেন থাইল্যান্ডের ইংলাক সিনাওয়াত্রা, মালয়েশিয়ার নাজিব রাজাক, ইসরায়েলের এহুদ ওলমার্টসহ আরও অনেকে।

নিকোলাস সারকোজি, ফ্রান্স

নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের আদালত নিকোলাস সারকোজিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। অভিযোগ, একটি আর্থিক চুক্তির মাধ্যমে তিনি লিবিয়ার নেতা কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছিলেন। পরে ২১ অক্টোবর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়, যদিও কিছুদিনের মধ্যেই তিনি জামিনে মুক্তি পান। সারকোজি ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে ছিলেন।

ইংলাক সিনাওয়াত্রা, থাইল্যান্ড

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ক্ষমতায় থাকতেই চালের ভর্তুকি সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। ২০১৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে তার সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। ২০১৭ সালের অগাস্টে তিনি গোপনে দেশ ছাড়েন এবং অনুপস্থিত অবস্থায় আদালত তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।

এহুদ ওলমার্ট, ইসরায়েল

প্রতারণার মামলায় ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্টকে দুই বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের শুরুতে তিনি মুক্তি পান। রাজনীতির বাইরে চলে গেলেও পরবর্তীতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নিয়ে মন্তব্যের জেরে মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।

অন্যদিকে নেতানিয়াহুও বর্তমানে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে বিচারাধীন। আল জাজিরা জানায়, এই মামলায় নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করার অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগকে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নাজিব রাজাক, মালয়েশিয়া

২০২০ সালে দুর্নীতির মামলায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে উচ্চ আদালতে আপিল খারিজ হওয়ায় ২০২২ সালের আগস্টে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেছিলেন, আর্থিক উপদেষ্টাদের ভুল পরামর্শের কারণেই তিনি এমন অবস্থায় পড়েছেন।

জ্যাকব জুমা, দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে দুর্নীতি তদন্তে সহযোগিতা না করার দায়ে ১৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গণবিক্ষোভের মধ্যেই তিনি শেষ পর্যন্ত পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। ২০০৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন জুমা।

পাক গান হে, দক্ষিণ কোরিয়া

দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট (২০১৩-১৭) পাক গান হেকে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে প্রথমে ক্ষমতাচ্যুত এবং পরে কারাগারে যেতে হয়। স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকারীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার ভিত্তিতে চাঁদা দাবি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও ছিল। ২০১৭ সালে অভিসংশিত হওয়ার পর ২০২১ সালে তাকে প্রেসিডেন্ট মুন জা ইন ক্ষমা করে দেন।

ক্ষমতা হারানোর পর বিচারের মুখোমুখি হওয়া নেতাদের এই তালিকায় আরও আছেন ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বারলুসকোনি, ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা (যিনি তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়) এবং বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিনাইন আনেজ।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×