শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশঃ ০৩:১৯ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডকে ন্যায়বিচার নিশ্চিতের উপায় হিসেবে দেখছে না অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটি বলেছে, এই শাস্তি ভুক্তভোগীদের প্রকৃত বিচার এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) মানবাধিকার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ চলাকালীন সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই স্বাধীন ও ন্যায্য বিচারের মাধ্যমে তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু এ বিচার এবং রায় কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি চান, অথচ মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকার লঙ্ঘনকে আরও বাড়ায়। এটি এক নিষ্ঠুর, অবমাননাকর ও অমানবিক শাস্তি, যা কোনো বিচারপ্রক্রিয়ায় স্থান পাওয়ার কথা নয়।”
অ্যাগনেস কালামার্ড আরও বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছেন। এই ভুক্তভোগী ও বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডসম্মত, সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়া প্রয়োজন। অথচ যে আদালতে এই বিচার হয়েছে, সেই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দীর্ঘদিনের সমালোচনা আছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, “আদালতটির স্বাধীনতার অভাব ও অন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার ইতিহাস রয়েছে। এর ওপর অনুপস্থিতিতে এমন দ্রুত সময়ে বিচার ও রায় ঘোষণার বিষয়টি এই ধরনের জটিল ও বৃহৎ মামলার ক্ষেত্রে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। যদিও শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন, আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল না। প্রতিরক্ষার পক্ষে পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্যপ্রমাণের জেরা করার সুযোগও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে, যা অন্যায্য বিচারপ্রক্রিয়ার আরও প্রমাণ।”
অ্যামনেস্টির মহাসচিবের মতে, “এটি কোনো ন্যায়সংগত বিচার ছিল না। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ভুক্তভোগীরা এর চেয়ে অনেক ভালো ন্যায়বিচারের যোগ্য। বাংলাদেশকে এমন একটি বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে, যা সম্পূর্ণ ন্যায্য, নিরপেক্ষ এবং যেকোনো ধরনের পক্ষপাতের ঊর্ধ্বে থাকবে এবং যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়ানোর মতো মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার না থাকে। এই পথেই কেবল প্রকৃত সত্য, ন্যায়বিচার ও প্রতিকার সম্ভব।”
সংস্থাটি স্পষ্টভাবে জানায়, তারা সব অবস্থায় ও সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে, অপরাধের ধরন, পরিস্থিতি কিংবা রাষ্ট্রের কার্যকর করার পদ্ধতি যাই হোক না কেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের জেরে সারাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা মনে করতেন, এ সিদ্ধান্ত তৎকালীন সরকারপন্থীদের সুবিধা দেবে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সরকারের সহিংস ব্যবহারের অভিযোগ ওঠার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিও জোরালো হয়ে ওঠে। সহিংসতার পর তিনি দেশত্যাগ করেন। জুন মাসে প্রসিকিউটররা তাঁর বিরুদ্ধে, সরকারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
এদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেআইনি শক্তি ব্যবহারের ঘটনাও নথিভুক্ত করে। সংস্থাটি ভিডিওভিত্তিক যাচাই-প্রমাণ প্রকাশ করে যেখানে প্রাণঘাতী ও অপ্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহার দেখানো হয়।
এ মামলায় সাবেক পুলিশপ্রধান এবং পরে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সরাসরি আদালতে উপস্থিত হয়ে দোষ স্বীকার করেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।