ভারতে টেসলার অভিষেক, উচ্চমূল্য ও প্রতিযোগিতার চাপে শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জে


ভারতে টেসলার অভিষেক, উচ্চমূল্য ও প্রতিযোগিতার চাপে শুরু থেকেই চ্যালেঞ্জে

দীর্ঘদিনের জটিল আলোচনা ও নানা প্রশাসনিক জটিলতা পেরিয়ে অবশেষে ভারতের বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করল বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা। মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রথম শোরুম উদ্বোধন হয়, যেখানে উন্মোচন করা হয়েছে জনপ্রিয় Model Y গাড়ি। এই SUV গাড়িটির প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মার্কিন ডলার বা ৬০ লাখ ভারতীয় রুপি, যা বৈশ্বিক বাজারের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তুলনামূলকভাবে, Model Y-এর দাম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয় ৪৪,৯৯০ ডলার থেকে এবং চীনে ৩৬,৭০০ ডলার থেকে।

ভারতের বাজারে টেসলা এনেছে Model Y-এর দুইটি সংস্করণ—রিয়ার হুইল ড্রাইভ (RWD) এবং লং রেঞ্জ RWD। প্রথমটির রেঞ্জ প্রায় ৫০০ কিলোমিটার এবং দ্বিতীয়টির রেঞ্জ ৬২২ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছে। সর্বোচ্চ গতি ঘন্টায় ২০১ কিলোমিটার। গাড়িতে রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি, যার মধ্যে আছে অটোমেটিক ব্রেকিং, ফরোয়ার্ড কোলিশন সতর্কতা, ব্লাইন্ড স্পট মনিটরিং এবং লেন ডিপার্চার সতর্কতা। এছাড়াও টেসলার নিজস্ব Dashcam ও Sentry Mode সুবিধা অন্তর্ভুক্ত। চালক সহায়তা প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে চাইলে গাড়িটির দাম আরও প্রায় ৬ লাখ রুপি বা ৭ হাজার ডলার বাড়বে।

Model Y-এর উচ্চ মূল্যের পেছনে প্রধান কারণ ভারতের আমদানি শুল্ক। সম্পূর্ণরূপে আমদানিকৃত গাড়ির উপর আগে যেখানে ১১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর ছিল, সেখানে নতুন নীতিমালায় তা কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, তবে শর্ত হিসেবে কোম্পানিকে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশে উৎপাদন শুরু করতে হবে। এই শুল্ক হ্রাসের দাবি টেসলা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিল, এমনকি ইলন মাস্ক একাধিকবার মন্তব্য করেছেন যে ভারতের আমদানি শুল্ক বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।

ভারত সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ৩০ শতাংশ যাত্রীবাহী যানবাহন বৈদ্যুতিক করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। ২০২৪ সালে ইভি বিক্রি ২০ শতাংশ হারে বেড়েছে, যদিও এটি এখনো দেশের মোট যাত্রীবাহী গাড়ির মাত্র ২.৫ শতাংশ। বর্তমানে দেশের ইভি বাজারে টাটা মোটরসের দখলে রয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ শেয়ার, যেখানে প্রতিযোগিতায় রয়েছে MG Motor India এবং মহিন্দ্রা। ২০২৪ সালে ২০ হাজার ডলারের বেশি মূল্যের গাড়িগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রির অংশ ছিল মাত্র ৬.৬ শতাংশ। এই প্রিমিয়াম সেগমেন্টেই টেসলাকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে মের্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, কিয়া এবং অডির মতো গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে।

টেসলার ভারতীয় বাজারে প্রবেশ এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন বৈশ্বিকভাবে কোম্পানির বিক্রি হ্রাস পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে টানা তিনটি প্রান্তিকে বিক্রির পরিমাণ কমছে, যেখানে সর্বশেষ প্রান্তিকে হ্রাসের হার ছিল ৬.৩ শতাংশ। ইউরোপে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে গত পাঁচ মাস ধরে টেসলার বিক্রিতে নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। চীন, যা টেসলার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার, সেখানে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রি কমেছে ১২ শতাংশ।

ভারতে প্রবেশের মাধ্যমে টেসলা নতুন একটি বাজারে নিজেদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুললেও, উচ্চমূল্য, কঠিন প্রতিযোগিতা এবং সীমিত ভোক্তাশ্রেণির কারণে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এই নতুন যাত্রায় টিকে থাকার জন্য টেসলাকে কার্যকরভাবে স্থানীয় উৎপাদন শুরু এবং ভারতীয় গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।"

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×