গাজায় অনাহারেই প্রাণ গেছে ৪৮ জনের, জুলাই দুর্ভিক্ষে


গাজায় অনাহারেই প্রাণ গেছে ৪৮ জনের, জুলাই দুর্ভিক্ষে

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট ভয়াবহ মাত্রা ধারণ করেছে। টানা যুদ্ধ, ত্রাণের অভাব এবং খাদ্য উৎপাদনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। শুধু জুলাই মাসেই না খেতে পেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৮ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অনাহারে মৃত্যু হয়েছে মোট ৫৯ জনের। অব্যাহত ইসরায়েলি সামরিক অভিযান, খাদ্য সরবরাহে বাধা এবং কৃষিজমির সিংহভাগকে ‘সামরিক এলাকা’ ঘোষণার ফলে গোটা গাজা এখন দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে পতিত।

খাবারের জন্য প্রতিদিনের লড়াই

সাধারণ মানুষের ন্যূনতম খাবার জোগাড় করাও এখন চরম দুরূহ হয়ে উঠেছে। একসময় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাইড ও চালক হিসেবে কাজ করা রাইদ আল-আথামনা এখন বেকার। ফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।

সারাদিন একটি কথা ভাবতে ভাবতেই কেটে যায়, আজ কী খাবো, কী খাওয়াবো পরিবারকে? বলেন আথামনা।

তিনি জানান, গাজায় এখন রুটির তীব্র সংকট। সামান্য আটাও পাওয়া যাচ্ছে অনেক বেশি দামে। গতকাল স্ত্রী ও বাচ্চাদের জন্য কিছুটা ডাল কিনতে পারলেও, আগামীকাল কী খাবেন তা তিনি জানেন না।

আথামনা আরও বলেন, সারাদিন ধরে কোথাও না কোথাও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। হয় শেলিং হচ্ছে, অথবা বিমান থেকে বোমা ফেলা হচ্ছে। মানুষ এক জায়গায় নিশ্চিন্তে আশ্রয় নিতে পারছেন না। সারাক্ষণ প্রাণের ভয়। তার ওপর খাবার নেই।

তিনি নিজ চোখে দেখেছেন, বহু মানুষ রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ছেন, যাদের অনেকের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে। আমি নিজে দেখেছি, কীভাবে মানুষ রাস্তার ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাচ্ছে।

গত মে মাসে শেষবার ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন আথামনা। তখন ইসরায়েল অস্থায়ীভাবে অবরোধ শিথিল করে কিছু ত্রাণ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়। সে সময় মনে হয়েছিল গাজার দুই মিলিয়ন মানুষ হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাবে। কিন্তু সেই আশাও এখন মিলিয়ে গেছে।

পরিস্থিতি সত্যিই শোচনীয়। এক টুকরো রুটির জন্যও লড়াই করতে হচ্ছে। আমি আমার নাতিনাতনিদের নিয়ে থাকছি। তারা সারাক্ষণ কাঁদছে খিদের জ্বালায়। কীভাবে ওদের মুখে একটু খাবার তুলে দেবো, সেই চিন্তাতেই প্রতিটি দিন কাটছে। বলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ ও সতর্কতা

জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গাজায় চলমান দুর্যোগ নিয়ে নিয়মিত সতর্কতা জানিয়ে যাচ্ছে। তারা বলছে, সেখানে পর্যাপ্ত খাদ্য ও ওষুধ পৌঁছানো যাচ্ছে না।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, গাজার ৮৮ শতাংশ ভূখণ্ড এখন সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকা হিসেবে ঘোষিত, যার বড় অংশই ছিল চাষযোগ্য জমি। ফলে সাধারণ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে গাদাগাদি করে অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে বাস করছে। অথচ সেখান থেকেও মাঝে মাঝেই উচ্ছেদ করা হচ্ছে তাদের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, গাজায় মানুষের তৈরি দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মানুষ খেতে পাচ্ছে না। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেখানে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মকর্তা রস স্মিথ জানান, গাজার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ একাধিক দিন না খেয়ে থাকছেন। এমনই রিপোর্ট তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে নারী এবং শিশুও আছে।

হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, প্রতিদিন গড়ে বাড়ছে দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর সংখ্যা। শুধু জুলাই মাসেই প্রাণ হারিয়েছেন ৪৮ জন, আর বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যু ৫৯ জনে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সামনে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×