ইরানকে ঘিরে ফের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল!
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:৪৮ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ইরানবিরোধী আগ্রাসন থামাতে চায় না ইসরায়েল। বরং এই যুদ্ধকে "সাফল্য" হিসেবে দেখছে দেশটির নেতারা। দাবি করা হচ্ছে, শীর্ষ ইরানি সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা, ইরানের প্রতিরক্ষা কাঠামো দুর্বল করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলায় রাজি করানো—সবকিছুই ছিল কৌশলগত অর্জন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “আমি গ্যাসের প্যাডেল থেকে পা সরানোর কোনও ইচ্ছা রাখি না।” অর্থাৎ নতুন হামলার প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
ইরানকে দুর্বল করাই মূল লক্ষ্য?
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় দেওয়া একাধিক বিশ্লেষকের মতে, ইসরায়েল এখন এমন সুযোগ খুঁজছে, যাতে ইরানকে আরও দুর্বল করা যায়, এমনকি শাসকদের ক্ষমতা থেকেও সরানো যায়। তবে এ ধরনের বড়সড় অভিযান চালাতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিতে হবে, যা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া কঠিন হতে পারে।
গত জুনের মাঝামাঝি আকস্মিকভাবে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে এক হাজারের বেশি ইরানি এবং ২৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন। ইসরায়েলের দাবি, আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এ হামলা চালানো হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ধ্বংস করা। তবে তেহরান দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, তাদের কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক।
"ইসরায়েলের জন্য আমরা প্রস্তুত"
আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, “আমরা ইসরায়েলের যেকোনও নতুন সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আবারও ইসরায়েলের ভেতরে গভীরভাবে আঘাত হানতে প্রস্তুত রয়েছে।”
ইরানবিষয়ক বিশ্লেষক ত্রিতা পারসি মনে করেন, নেতানিয়াহু ইরানকে সিরিয়া বা লেবাননের মতো পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে চান—যেখানে ইসরায়েল যেকোনো সময় হামলা চালিয়ে পার পেয়ে যাবে।
রাজনৈতিক সুযোগে সামরিক আগ্রাসন?
পারসি আরও জানান, “ইসরায়েল চায় ইরান এমন এক অবস্থায় থাকুক, যাতে তাদের ওপর বারবার হামলা চালানো যায়।” বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপ যদি আবার ইরানের ওপর কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে সেটি হতে পারে নতুন যুদ্ধে নামার অজুহাত। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আলোচনা হয়েছে, আগস্টের মধ্যে নতুন চুক্তি না হলে জাতিসংঘের পুরোনো নিষেধাজ্ঞা ফের কার্যকর করা হবে।
২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় যেসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, সেগুলো ফেরার আশঙ্কায় ইরান আবার চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন পারসি। এতে ইসরায়েলের হাতে আবারও হামলার কৌশলগত সুযোগ তৈরি হবে।
ইরানের ভেতরে আগুন ও বিস্ফোরণ: ইসরায়েলের ইঙ্গিত?
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েল হয়তো ইতোমধ্যে ইরানের অভ্যন্তরে নাশকতা অভিযান শুরু করেছে। রহস্যজনকভাবে আবাসিক ভবন, তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর এলাকা ও জুতার কারখানায় আগুন লাগা বা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এসবের পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতা থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, “ইসরায়েল ইরানের ভেতরে যে গোয়েন্দা কাঠামো গড়েছে, মাঝে মাঝে সেটাকে সক্রিয় রাখতে হয়। অনেক সময় কৌশলগত প্রয়োজনে নয়, বরং কেবল একটা বার্তা দেওয়ার জন্য আগুন বা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।”
গাজার অভিযানেও থেমে নেই নেতানিয়াহু
গাজায় নির্মম অভিযান চালানোর পাশাপাশি নেতানিয়াহু সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরানেও সামরিক চাপ অব্যাহত রেখেছেন। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে পড়া নেতানিয়াহু নতুন করে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েলি জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চাইছেন।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্র কী করবে?
ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, “ইরান ইস্যুতে ইসরায়েলে রাজনৈতিক ঐক্য থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটাই নেতানিয়াহুর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সিআইপির ইরান বিশেষজ্ঞ নেগার মরতাজাভি বলেন, “ইরান জানে, যদি নতুন কোনো পারমাণবিক চুক্তি হয়, তাহলে ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি কমে যাবে। তবুও তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।”