বিমান থেকে ফেলা ধুলোমাখা চাল কুড়াচ্ছে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা


বিমান থেকে ফেলা ধুলোমাখা চাল কুড়াচ্ছে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা

ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে পিষ্ট গাজায় আকাশ থেকে ছোড়া ত্রাণ কুড়াতে বালি মিশ্রিত চালের জন্য ছুটছেন ক্ষুধার্ত মানুষ। বিমান থেকে ফেলা এই খাদ্য সহায়তা হয়ে উঠেছে গাজাবাসীর শেষ ভরসা, যেখানে প্রতিদিনই বেড়ে চলছে মৃত্যুর মিছিল।

গাজা উপত্যকায় দীর্ঘদিনের ইসরায়েলি অবরোধের কারণে তৈরি হওয়া চরম মানবিক সংকটে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য ফিলিস্তিনি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে জড়ো হওয়া ক্ষুধার্ত মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে দখলদার বাহিনী।

এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে কয়েকটি দেশ আকাশপথে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে। তবে সেই খাদ্য ভূমিতে পড়ার পর তা সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে নিরন্ন শিশু ও বৃদ্ধদের, যেন এক করুণ প্রতিযোগিতা।

আল জাজিরা অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে নিশ্চিত করেছে, গাজা উপত্যকায় বিমান থেকে ছোড়া খাদ্য সহায়তা—বালি মিশ্রিত চাল—সংগ্রহ করতে ছোটাছুটি করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। ক্লিপগুলোতে দেখা যায়, খাদ্যের সন্ধানে মরিয়া মানুষেরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সাহায্যের দিকে।

গাজা থেকে সাংবাদিক মোতাসেম আদলি বলেন, "বিমানগুলো সাহায্য ফেলে দেয়। মরিয়া লোকগুলো বেঁচে থাকার জন্য এগুলো নিতে প্রতিযোগিতা করে। চারদিক থেকে অবরুদ্ধ মানুষের ট্র্যাজেডির সারসংক্ষেপ।"

অন্যদিকে, বালি মিশ্রিত চাল সংগ্রহের একটি ভিডিও শেয়ার করে গাজার সাংবাদিক সালমা কাদ্দৌমি লিখেছেন, "ক্ষুধার্ত মানুষকে বালুভর্তি চাল খাওয়ানো হচ্ছে। বিমান থেকে বোমা ফেলার মতো করে বাস্তুচ্যুতদের ওপর অপমানজনকভাবে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।"

২৭ মে থেকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ কিংবা আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোর সহায়তা ছাড়াই গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একটি আলাদা ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেছে। বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংগঠনগুলো এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ছুড়ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত শত শত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

২০২৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এতে প্রাণ গেছে অন্তত ৫৯ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনির, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। টানা বোমাবর্ষণে ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো অঞ্চল এবং চরম খাদ্য ঘাটতিতে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ।

গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি ইসরায়েল বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×