জাতিসংঘের বেশিরভাগ রিপোর্ট কেউ পড়ে না, স্বীকার জাতিসংঘের
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৯:২১ পিএম, ০২ আগস্ট ২০২৫
জাতিসংঘের তৈরি হাজার হাজার প্রতিবেদন মূলত পাঠকের অভাবে অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে—এমন বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ নিজেই। সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ সংস্কারমূলক এক উদ্যোগে উঠে এসেছে এই তথ্য, যা জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক ভার ও অকার্যকর ব্যয় ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরেছে।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার, ১ আগস্ট এক বিবৃতিতে জানান, প্রতিবছর তৈরি হওয়া বিপুল সংখ্যক রিপোর্ট ও সভার চাপে জাতিসংঘের কার্যক্রম কার্যত ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, গত বছর জাতিসংঘের অধীনে ২৭ হাজার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যাতে অংশ নিয়েছে ২৪০টি সংস্থা ও কমিটি। এ সময়ের মধ্যে ১ হাজার ১০০টি প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়, যা ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
গুতেরেস বলেন, “এই বিপুল পরিমাণ সভা ও প্রতিবেদন আমাদের সবাইকে এক প্রকার চূড়ান্ত ক্লান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “এসব প্রতিবেদনের বেশিরভাগই খুব একটা পড়া হয় না। মাত্র পাঁচ শতাংশ প্রতিবেদন ৫ হাজার ৫০০ বারের বেশি ডাউনলোড হয়। আবার প্রতি পাঁচটির একটির ডাউনলোড সংখ্যা এক হাজারের নিচে। আর ডাউনলোড মানেই যে কেউ তা পড়ছে, সেটাও নয়।”
২০২৫ সালে জাতিসংঘের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গঠিত ইউএন৮০ টাস্কফোর্স চলতি বছরের মার্চে কাজ শুরু করে। সংস্থাটির কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে তারা বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো— ‘ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের পদ্ধতি পর্যালোচনা’।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণ পরিষদ এবং নিরাপত্তা পরিষদের মতো শীর্ষ সংস্থাগুলো থেকে যে হাজার হাজার নির্দেশনা বা ‘ম্যান্ডেট’ আসে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রতিবছর প্রচুর সভা ও প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়, যা সংস্থাটির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
অর্থসংকটও জাতিসংঘের বর্তমান সমস্যাগুলোর একটি বড় অংশ। টানা সাত বছর ধরে চলা তীব্র বাজেট ঘাটতির পেছনে মূল কারণ হলো— সদস্য ১৯৩টি দেশের অনেকেই নিয়মিত এবং সময়মতো চাঁদা পরিশোধ করে না। এর ফলে কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং ব্যয় সংকোচন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় মহাসচিব গুতেরেস প্রস্তাব দিয়েছেন— রিপোর্ট ও সভার সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। তবে যেসব প্রতিবেদন তৈরি হবে, তা যেন নিঃসন্দেহে সংশ্লিষ্ট ম্যান্ডেট পূরণে সক্ষম হয়।
সূত্র: রয়টার্স