আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান: গাজার এক মায়ের আকুতি


আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান: গাজার এক মায়ের আকুতি

মধ্য গাজার মাঘাজি এলাকার ৩৮ বছর বয়সী মা জামিল মুগারি তাঁর পরিবারের ভীষণ কষ্টের কাহিনী তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমার সব সন্তানের শরীরের ওজন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের ওজন এখন মাত্র ১১ কেজি। আমার ছেলে মোহাম্মদ কেবল চামড়া ও হাড় হয়ে গেছে। সব সন্তানের একই অবস্থা। নিজের ওজন আগে ৮৫ কেজি ছিল। এখন ৫৫ কেজিতে নেমে এসেছে। আমি বিশ্বকে শুধু এটুকুই বলতে পারি, আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি; এই ট্র্যাজেডি থেকে আমাদের বাঁচান।”

তিনি আরও জানান, খাদ্যের অভাবে শারীরিক শক্তি ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। খাবারের খোঁজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, রাস্তায় হাঁটার সময় মাথা ঘোরে, মাঝে মাঝে কাঁপুনি অনুভব করেন। তিনি বলেন, “দিনে মাত্র একবার খাবার খাই, যা ডাল।”

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৩ ত্রাণপ্রার্থীসহ মোট ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ভিক্ষ এবং অপুষ্টির কারণে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৯৩ জন শিশু রয়েছে। এই ঘটনায় গাজায় অনাহারে মারা যাওয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৯ জনে। এছাড়া ইসরায়েলি হামলায় মোট ৬০,৪৩০ জন নিহত ও ১,৪৮,৭২২ জন আহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের ক্ষুধা বিশেষজ্ঞরা জানান, গাজার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে গাজায় দুটি ভয়ংকর মাইলফলক ছাড়িয়েছে — ফিলিস্তিনি মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং ১,৩৮০ জন ত্রাণপ্রার্থী নিহত হয়েছেন।

গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন পরিচালিত চারটি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র দিনে কেবল কয়েক মিনিটের জন্য খুলে যায়। সেখানে হাজার হাজার মানুষ খাবারের জন্য অপেক্ষা করেন। তবে, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অনেকের প্রাণ যায়। ৫৮ বছর বয়সী বিধবা মানসুরা ফাদল আল-হেলু বলেন, “সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ ও অত্যন্ত বিপজ্জনক।” দেইর আল-বালাহ এলাকার আবু আল-আবেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যখন ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের কথা আসে, তখন আরব-অনারব কেউ আমাদের মনে রাখে না।”

উত্তর গাজার জরুরি ও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার প্রধান ফারেস আফানাহ আলজাজিরা জানান, ইসরায়েলি হামলায় তার বিভাগের ৮০ শতাংশ যানবাহন ধ্বংস হয়ে গেছে।

ত্রাণ বিতরণ নিয়ে একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রানা আত্তিয়া বলেন, “আমাদের মনে হয়, বিমান থেকে খাবার ফেলার পর হাড়ের পেছনে ছুটতে থাকা কুকুরের মতো আমাদের দশা। এতে আমরা অপমানিত।”

গাজার পরিস্থিতি ক্রমেই আরও সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে, যেখানে সাধারণ মানুষ দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ এবং নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়ে জীবন রক্ষার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

ঢাকাওয়াচ২৪ডটকমে লিখতে পারেন আপনিও ফিচার, তথ্যপ্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, ভ্রমণ ও কৃষি বিষয়ে। আপনার তোলা ছবিও পাঠাতে পারেন dhakawatch24@gmail.com ঠিকানায়।
×