বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলে আদিবাসীদের অস্ত্রের অনুমোদন দিচ্ছে ভারত
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশঃ ০৩:২৭ পিএম, ০৭ আগস্ট ২০২৫
বাংলাদেশ-সংলগ্ন সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে অস্ত্র বহনের লাইসেন্স দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের আসাম রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রী শর্মা দাবি করেন, ‘‘বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে এমনকি নিজ গ্রামেও অসমীয়া জনগণ হামলার হুমকির মুখে রয়েছেন।’’
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই রাজ্যটি দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত, ভাষাগত এবং ধর্মীয় বিভাজনের কেন্দ্রস্থল হয়ে আছে। প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার আসামে ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ, যাদের বেশিরভাগ বাংলা ভাষাভাষী। হিন্দুরাই এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী শর্মা একটি ওয়েবসাইট চালুর ঘোষণা দেন, যার মাধ্যমে রাজ্যের সংবেদনশীল এলাকায় বসবাসরত এবং নিজেকে নিরাপত্তাহীন মনে করা আদিবাসীরা অস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভারতে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন বরাবরই কঠোর। সেই প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই পদক্ষেপ সহিংসতা বাড়াতে পারে।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ লিখেছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার এই উদ্যোগে গ্যাং সহিংসতা ও ব্যক্তিগত প্রতিশোধমূলক অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। এটি সুশাসন নয়, বরং আইনহীনতার দিকে এক বিপজ্জনক পশ্চাৎগামী পদক্ষেপ।’’
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা এবং তিনি আসামের সংখ্যাগরিষ্ঠ অসমীয়া জনগণের স্বার্থে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কার্যক্রমের আওতায় রয়েছে বিতর্কিত উচ্ছেদ অভিযান, যেখানে তিনি অভিযুক্তদের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ বা ‘সন্দেহভাজন নাগরিক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এসব কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম জনগোষ্ঠী। যদিও এদের অনেকেই বহু প্রজন্ম ধরে আসামে বসবাস করছেন এবং তারা ভারতীয় নাগরিক, এমনকি ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের বহু আগেই তাদের পূর্বপুরুষেরা এ অঞ্চলে বসতি গড়েন।
আসামই ছিল ২০১৯ সালে চালু হওয়া ভারতের বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) কার্যক্রমের প্রথম রাজ্য। এই নাগরিক যাচাই প্রক্রিয়ার ফলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়েন, যাদের একটি বড় অংশ মুসলমান।
সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের পরিবর্তনের পর থেকে আসামে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর ‘‘আদিবাসী জনগণ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশে বসবাস করছেন।’’
সূত্র: এএফপি